জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। তবে বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলগুলো জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় না। নির্বাচন কমিশনও তাদের পুরো মনোযোগ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে নিবন্ধ রেখেছে। তবে এর মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতীক সংখ্যা বাড়ানোর কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
ইসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কথা বিবেচনা করে আমরা প্রতীক বাড়ানোর কার্যক্রম শেষ করেছি। এখন বিধি সংশোধন হলেই তা কার্যকর হবে। এই তালিকায় ৬৯টি প্রতীক ছিল তফসিলভুক্ত। দাঁড়িপাল্লা ও শাপলা প্রতীকসহ নতুন আরও প্রায় ৫০টির মতো প্রতীক যুক্ত করা হচ্ছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, নতুন এই প্রতীকগুলোর বেশির ভাগই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রতীকের তালিকা থেকে নেওয়া হয়েছে। যার ফলে জাতীয় নির্বাচনে প্রতীকের সংস্থা বাড়লেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতীকের সংখ্যা কমে গিয়েছে। এজন্য আমরা পরিকল্পনা করছি যে, জাতীয় নির্বাচনের প্রতীকের বিধিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রতীক বাড়ানোর কার্যক্রম হাতে নেব।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ ঢাকা মেইলেকে বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রতীক বৃদ্ধি জন্য কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এখন যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য প্রতীক বৃদ্ধি করা প্রয়োজন হয় তাহলে তাও করা হবে।’
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রাজনৈতিক দলের জন্য যে প্রতীকগুলো বাড়ানো হয়েছে সেখানে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রতীক থেকে কিছু প্রতীক নেওয়া হয়েছে। আবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেহেতু এখন নেই তাই সেখান থেকে আমরা প্রতীক নিয়েছি। সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বাড়ানোর কার্যক্রম শেষ করেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রতীক বাড়ানোর কার্যক্রমে হাত দেব। এর জন্য আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন কবে হবে সেটার জন্য অপেক্ষা করব না।’
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, সিটি নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন বা উপজেলা নির্বাচন যাই হোক না কেন, প্রতীক কিন্তু আলাদা নয়। শুধু তফসিলগুলো আলাদা হয়। যখন যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তখন ওই নির্বাচনের বিধিমালা অনুযায়ী প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মোট প্রতীকের সংখ্যা যদি হিসাবে করা হয় তাহলে দাঁড়াবে ৯৪টির মতো। এই ৯৪টি প্রতীকের মধ্যে সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রতীক রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীকের সংখ্যা প্রায় ৫০টির মতো বাড়ানো হয়েছে। যার বেশির ভাগই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য বরাদ্দকৃত প্রতীক থেকে নেওয়া। আবার রাজনৈতিক দলের সংখ্যাও বাড়ছে। সেক্ষেত্রে সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রতীক বাড়ানো হলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য প্রতীক বাড়াতে হবে।
২০১৯ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল থেকে জানা যায়, মেয়র পদের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীর জন্য মোট ৪০টি প্রতীক, মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য মোট ১২টি প্রতীক, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের জন্য মোট ১০টি প্রতীক এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদের জন্য মোট ১২টি প্রতীক রয়েছে।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল থেকে জানা যায়, চেয়ারম্যান পদে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীদের জন্য ৪৪টি, চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদে জন্য ১৮টি, ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীদের জন্য ৪৪টি ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ১২টি, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীদের জন্য ৪৪টি, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ১০টি প্রতীক নির্ধারিত ছিল। এছাড়া মহিলা সদস্য পদে নির্বাচন প্রার্থীদের ১০টি প্রতীক নির্ধারিত রয়েছে।
পৌরসভা নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল থেকে জানা যায়, মেয়র পদে নির্বাচনের রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীদের জন্য মোট ৪১টি প্রতীক, মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ১২টি প্রতীক, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের জন্য মোট ১০টি প্রতীক এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের জন্য মোট ১২টি রয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল থেকে জানা যায়, চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীর জন্য মোট ৪০টি প্রতীক, চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ১০টি প্রতীক, সংরক্ষিত আসনের সদস্য পদে নির্বাচনের জন্য মোট ১০টি প্রতীক এবং সাধারণ আসনের সদস্য পদের জন্য মোট ১২টি প্রতীক রয়েছে।