যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে এক নারীকে সরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে। লরা লুমার নামের এই নারীকে নিজের ক্যাম্পেইনগুলোতে নিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্পের নিজ দলের লোকেরা। কারণ এই নারী মুসলিম বিদ্বেষী এবং ষড়যন্ত্রবাদী হিসেবে পরিচিত।
লরা লুমারকে অনেকেই কট্টোর মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে জানেন। এছাড়া ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা মার্কিন সরকারের ভেতরের ষড়যন্ত্র ছিলো, এমন দাবির কারণেও আলোচনা ও শিরোনামে এসেছিলেন তিনি।
গত বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে ৯/১১ হামলার একটি অনুষ্ঠানে লরাকে দেখা যায়। এরপর খোদ ভিকটিমদের পরিবার এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ট্রাম্পের সমালোচনা করে।
গত মঙ্গলবার ৩১ বছর বয়সী এই নারী ট্রাম্পের সঙ্গে ফিলাডেলফিয়াতে যান। সেখানে প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে অংশ নেন ট্রাম্প। ওই বিতর্কে সাবেক প্রেসিডেন্ট দাবি করেন হাইতির অভিবাসীরা ওহাইও সিটি বাসিন্দাদের পোষ্য প্রাণী খেয়ে ফেলছেন। ট্রাম্পের এমন দাবি অবাক করে সবাইকে।
পরবর্তীতে জানা যায়, এই অদ্ভুত তথ্য প্রথমে ছড়ান ষড়যন্ত্রবাদী লরা। তিনি তার এক্স অ্যাকাউন্টে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। যেখানে তাকে প্রায় ১২ লাখ মানুষ ফলো করেন।
ট্রাম্পের দলের কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, হাইতির অভিবাসীদের পোষা প্রাণী খেয়ে ফেলার মতো কথা ট্রাম্প বলেছেন শুধুমাত্র লরার কথা শুনে।
ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের কর্মীরা আমেরিকার নিউজ আউটলট সিমাফোরের কাছে স্বীকার করেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে লুমারের ঘনিষ্ঠতা বিষয়টি তাদেরকে ভাবাচ্ছে এবং বিষয়টি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।
তারা মনে করছেন, যদি ট্রাম্প সত্যিকার অর্থেই লরা লুমারকে কাছে টেনেছেন, তাহলে সেটি হবে তাদের প্রচারে বড় বাধা।
রিপাবলিকান পার্টির নর্থ ক্যারোলিনার সিনেটর থম তিলিস এক্সে লরার সমালোচনা করে বলেছেন, ‘লরা লুমার একজন উন্মাদ ষড়যন্ত্রবাদী যিনি রিপাবলিকানদের মধ্যে বিভেদ তৈরিতে প্রায়ই আলতু ফালতু কথা বলেন।’
এদিকে বিতর্কিত লরা সম্পর্কে ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি লরাকে নিয়ন্ত্রণ করি না। তার যা বলা উচিত সে তাই বলে। সে একজন মুক্ত মানুষ।’
লরা নিজেই জানিয়েছেন উবার এবং লাইফটের মুসলিম চালকদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করায় এই দুটি প্লাটফর্ম থেকে তাকে ব্যান করা হয়েছে।
১৯৯৩ সালে অ্যারিজোনায় জন্ম নেয়া লুমার একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। প্রজেক্ট ভেরিটাস এবং ইনফোয়ার্সসহ বেশ কিছু সংস্থায় কর্মী এবং ভাষ্যকার হিসাবে কাজ করেছেন। ২০২০ সালে তিনি ফ্লোরিডা থেকে ট্রাম্পের সহায়তায় প্রতিনিধি পরিষদের প্রার্থী হলেও, ভোটযুদ্ধে হেরে যান।
দুই বছর পর তিনি আবারও একই চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বর্তমানে ট্রাম্পের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক হিসাবেই বেশি পরিচিত লুমার। কমলা হ্যারিস ‘কালো’ নন এবং বিলিয়নেয়ার জর্জ সোরোসের ছেলে ট্রাম্পকে হত্যার আহ্বান জানিয়ে রহস্যজনক বার্তা পাঠাচ্ছেন এমন দাবিসহ নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারের জন্য পরিচিত।
এসব দাবি নিয়ে বিতর্কিত পোস্টের কারণে বেশ কয়েকটি সামাজিক মাধ্যম লুমারকে নিষিদ্ধ করে। এর মধ্যে রয়েছে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। এসব মাধ্যমে লুমারের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মুসলিমদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় ম্যাটা প্লাটফর্মে তিনি নিষিদ্ধ।
লুমার নিজেকে এক কঠোর মুসলিম বিদ্বেষী হিসাব দাবি করেন এবং ‘ইসলামোফবিয়া’র একজন গর্বিত কর্মী হিসাবে গর্ব বোধ করেন। এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিত আমেরিকার মুসলিম সমাজ কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের কর্মীরা জানান, লুমারের কারণে তারা মুসলিমদের সমর্থন হারাবেন।
লুমার প্রায়ই ট্রাম্পের সমর্থনে বিভিন্ন ইভেন্টে যোগ দেন এবং এর আগে তাকে তার ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের বাসভবন মার-এ-লাগোতে দেখা গেছে। এই বছরের শুরুতে তিনি আইওয়াতে ট্রাম্পের বিমানে ভ্রমণ করেছিলেন। ট্রাম্প তার নিজস্ব সমাজিক মাধ্যম ট্রুথে লুমারের বেশ কিছু ভিডিও শেয়ারও করেছেন।
গত বছর নিউইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করেছে যে, ট্রাম্প তার প্রচারের জন্য লুমারকে নিয়োগ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। ট্রাম্পের শীর্ষ সহযোগীরা সতর্ক করে দিয়ে জানান, এ ধরনের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হতে পারে। এমন প্রতিক্রিয়ার পর ট্রাম্প তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন বলে জানা গেছে।
সূত্র: বিবিসি