Home কিশোরগঞ্জ জুলাইয়ের অর্জনকে কুক্ষিগত করতে দেওয়া হবে না: শরীফুল আলম

জুলাইয়ের অর্জনকে কুক্ষিগত করতে দেওয়া হবে না: শরীফুল আলম

2

কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি মো. শরীফুল আলম বলেছেন, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকে ইতিহাস লিখতে গিয়ে অনেকেই কুক্ষিগত করে মাত্র এক মাস পাঁচ দিনের একটি আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে এ আন্দোলনের অর্জনটুকু সম্পূর্ণরূপে তারা পকেটস্থ করতে চায়। কিন্তু এ অর্জন এ দেশের আপামর জনসাধারণের, ১৮ কোটি মানুষের। জুলাইয়ের এই অর্জন কাউকে কুক্ষিগত করতে দেওয়া হবে না।

মো. শরীফুল আলম বলেন, আমি বলতে চাই, আমরা এই অর্জনটাকে কোনো গোষ্ঠী বা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ১৭ বছরে যারা শ্রম দিয়েছেন, কষ্ট করেছেন, জীবন দিয়েছেন এই আন্দোলনের পিছনে, আমরা সবাইকে স্যালুট জানাই, শ্রদ্ধা করতে চাই। সবাই মিলে এই দেশটাকে একটা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান: শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কিশোরগঞ্জে আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান ও ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচির আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মো. শরীফুল আলম এসব কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের ডক্টর’স মিলনায়তনে ডক্টর’স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল শাখা এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

মো. শরীফুল আলম বলেন, অনেকেই বলতে চান, বিএনপি নির্বাচনের জন্য পাগল হয়ে গেছে। আমরা নির্বাচনের জন্য পাগল হইনি। আমরা মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য রক্ত ও জীবন দিয়েছি। বিএনপি ক্ষমতায় আসবে না কোন দল ক্ষমতায় আসবে, এটা বড় কথা নয়। আমরা তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। অনেকেরই হয়তো নির্বাচনের প্রস্তুনি নেই, অনেকের হয়তো স্ট্রাকচার নেই, সে দায়িত্ব যদি সরকার নিতে চায় ভুল করবে। আমরা চাই একটা স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রীকে হটাতে জনগণ যেভাবে রক্ত দিয়েছে, আমরা সেই কারণে মানুষের অধিকারের প্রশ্নে বার বার নির্বাচন দরকার বলছি। এ দেশের তরুণ প্রজন্ম, প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভোটার যারা জীবনে ভোট দিতে পারেনি, সেই ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্যই বিএনপি কথা বলছে, নির্বাচনের জন্য পাগল হয়নি।

মো. শরীফুল আলম যোগ করেন, বিএনপি যদি নির্বাচনের জন্য পাগল হতো, তাহলে অনেক সুযোগ আগে আসছে। আমাদের লক্ষ্য ছিলো শুধু জিয়াউর রহমান যে শিক্ষা দিয়েছেন, মানুষের ভালোবাসা ও মানুষের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে হবে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে, সেই আদর্শে দীক্ষিত হয়ে আমরা জীবন দিয়েছি, সংগ্রাম করেছি, আমরা কোনো মন্ত্রী এমপি কিংবা দল ক্ষমতায় যাওয়ার এসব করিনি। হাজার হাজার মাইল দূর থেকে সেই নেতৃত্ব দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে জাতিকে এই আন্দোলনে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছেন। সেই কারণে আমরা গর্ববোধ করি। আমরা অহংকার করি না, আল্লাহর কাছে শোকরিয়া করি। সবাই মিলে সকল রাজনৈতিক শক্তি সকল পেশাজীবী সুশীল সমাজ সবাই মিলে আমরা সেই কাজটি করতে পেরেছি। এখনো আমরা আমাদের সেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি।

মো. শরীফুল আলম আরো বলেন, জাতীয়তাবাদী দলসহ ১৭ বছর যে রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে সমস্ত অন্যায়-অত্যাচার, জুলুম-নির্যাতনের বিপক্ষে রাজপথে থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, সে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে আমরা অসংখ্য তাজা প্রাণ হারিয়েছি। বিএনপি সে আন্দোলনের মূল দায়িত্ব, একা করেছে সেটি আমরা বলতে চাই না। আমরা সকল রাজনৈতিক শক্তি যারা একসাথে রাজপথে থেকে জোট করে ঐক্যবদ্ধভাবে অথবা যুগপৎ আন্দোলন করে রাজপথে সংগ্রাম করেছি, আমরা জীবনবাজি রেখে, এক লক্ষ ৩৫ হাজার মামলা, প্রায় ৪৫ লক্ষ আসামি কাঠগড়া মাথায় নিয়ে রাজপথে সংগ্রাম করেছি, আন্দোলন করেছি।

ইলিয়াস আলী-চৌধুরী আলমসহ অসংখ্য নেতাকর্মী হারিয়েছে, আজো সন্তানেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছে- তার পিতা ঘরে ফিরবে। তারা কবর জিয়ারত করতে পারে না। নেতাকর্মীরা পরিবারের জানাজা পড়তে পারেনি। আশায় বুক বেঁধে ছিলো- এ জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে বিজয়ের পর হয়তো বা তাদের সেই অভিভাবক ফিরে আসবে। আজো তাদের কোনো সন্ধান নেই।

বিগত সময়ের বিভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে শরীফুল আলম বলেন, হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে আমরা দেখেছি, কিভাবে মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমরা দেখেছি, সেনাবাহিনীর মতো চৌকস ও দেশপ্রেমিক বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য বিডিআর হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিলো। প্রত্যেকটি কর্মকাণ্ড এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে লিপিবদ্ধ হতে হবে। আমরা মনে করি, প্রত্যেকটা আত্মত্যাগ এই বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে নেপথ্যে আমাদের উৎসাহ যুগিয়েছে। জাতীয়তাবাদী দলের প্রত্যেকটা নেতাকর্মী রাজপথে জীবনবাজি রেখে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে।

ড্যাব শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল শাখার আহ্বায়ক ডা. মো. মজিবর রহমানের সভাপতিত্বে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও ব্লাড গ্রুপিং কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম।

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি মো. আমিরুজ্জামান, ডা. আতিকুল সারোয়ার, এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা ও পিপি জালাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ পৌর বিএনপি’র সভাপতি আমিনুল ইসলাম আশফাক, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. একরাম আহসান জুয়েল, ড্যাব শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল শাখার সদস্য সচিব ডা. এস.কে.এম. নাজমুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মীর সাদ সৈকত, জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান জিএস শরীফ, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মো. মারুফ মিয়া প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এ সময় চিকিৎসক, মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here